32 C
Dhaka
সোমবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩
অপরাধ ও প্রশাসনচরচারতলায় নৈরাজ্য বন্ধ করবে কে?

চরচারতলায় নৈরাজ্য বন্ধ করবে কে?

গোষ্ঠীগত দাঙ্গায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ভাই নিহত হওয়ার ঘটনায় ৪ মাস ধরে নৈরাজ্য চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার চরচারতলা গ্রামে। প্রতিপক্ষের তিন শতাধিক ঘর-বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানোর অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সি ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। কয়েক দফায় চালানো  ভাঙচুর লুটপাটের পর থেকেই পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। আতঙ্কে নারীরাও বাড়িতে থাকতে পারছেন না।

ঘরের দরজা-জানালা ও টিনের চালা পর্যন্ত খুলে নেওয়া হয়েছে। হানিফ মুন্সির প্রভাবে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আশুগঞ্জ থানায় মামলা করতে পারেনি ভুক্তভোগীরা। পরবর্তীতে আদালতে মামলা করা হলেও তদন্ত কাজ থমকে আছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২২ জানুয়ারি রাতে গোষ্ঠীগত দাঙ্গায় চরচারতলা গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সির ভাই জামাল মুন্সি নিহত হন। গ্রামের লতিফবাড়ি ও খন্দকার বাড়ির লোকজনের হামলায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে অভিযোগ করা হয়।

পরবর্তীতে নিহত জামাল মুন্সির বড় ভাই জাহাঙ্গীর মুন্সি বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আর ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে আশুগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই গ্রেফতার এড়াতে প্রতিপক্ষের পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে আছেন। পরবর্তীতে দফায় দফায় গ্রামের লতিফ বাড়ি, খাঁ বাড়ি, খন্দকার বাড়ি ও নাগর বাড়ি বংশের তিন শতাধিক ঘর-বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর করা হয়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হানিফ মুন্সি ও তার ভাই-ভাতিজারা ভাঙচুর লুটপাটে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখনো প্রতিপক্ষের ওপর হামলা নির্যাতন অব্যাহত আছে। হানিফ মুন্সির ভয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো গ্রামে ফিরতে পারছেন না। অনেকেই অন্য এলাকায় তাদের স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আদালতে ৮টি মামলা করে ভুক্তভোগীরা। প্রতিটি মামলায় হানিফ মুন্সি ও তার পরিবারের সদস্যসহ ২৫/৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলো পিবিআই ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে আদালত। কিন্তু হানিফ মুন্সির প্রভাবে মামলাগুলোর তদন্ত থমকে আছে বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদীরা।

সরেজমিনে চরচারতলা গ্রামে গিয়ে অনেক বাড়িতেই লুটপাটের চিহ্ন দেখা গেছে। ভাঙা হয়েছে পাকাস্থাপনাও। লুটপাটের সময় আসবাবপত্রের পাশাপাশি দরজা জানালা খুলে নেওয়া হয়েছে। এখনো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঘরের বিভিন্ন মালামাল। লতিফবাড়ি ও খন্দকার বাড়ির লোকজন অভিযোগ করে বলেন, হানিফ মুন্সির লোকজন তাদের জমি থেকে ধানসহ নানা জাতের সবজিও নিয়ে গেছেন।

গত শনিবার রাতে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় চরচারতলা গ্রামের খন্দকার বাড়ির স্বপ্না বেগমের ঘর। তিনি জানান, এর আগে ঘরের তালা ভেঙে সবকিছু নিয়ে গেছে। ভয়ে তিনি ঘরে থাকতে পারেন না। রাতে ঘরে ইটপাটকেল মেরে ভয় দেখানো হয়। এ কারণে তিনি আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। ৪ মাস ধরে অনেক কষ্টে দিন কাটছে বলে জানান তিনি।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সি বলেন, আমি ভাই হারানোর শোকে কাতর। এলাকায় যেন নতুন করে কোনো ঝামেলা না হয়, সেজন্য সেখানে পুলিশ আছে। তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও আমি করছি। এ ছাড়া নিজে থেকে চারজন লোক দিয়ে রেখেছি যেন কোনো ধরনের সমস্যা না হয়।

তিনি আরও বলেন, মামলার আসামিরা চাচ্ছে না আমি ভাই হত্যার বিচার চাই। এ কারণে নিজেরাই ভাঙচুর ও লুটপাট করে অভিযোগ আনছে। উচ্চ আদালত থেকে জামিন এনে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার কথা থাকলেও সেটা তারা করেনি।

আশুগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ ঘর-বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেননি বলে জানান তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, হত্যা এবং বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট দুটোই অপরাধ। এর সঙ্গে কোনো জনপ্রতিনিধির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বাধিক পঠিত

Probably The Most Accurate Plagiarism Checker Free

Write My Essay For Me Essay Author For Top-quality Work️

Check Your Grammar Proofread On-line

Free Online Punctuation Checker For School Essays

পাঠকের মন্তব্য