বেলাল রিজভী (সিনিয়র রিপোর্টার)
ছয় বছর আগে ২০১৯ সালের ২২ জুন গঠিত হয়েছিল মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। তিন মাসের জন্য গঠিত এই কমিটি আজও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চরম হতাশা, দলীয় কার্যক্রমে নেমেছে স্থবিরতা, আর জেলা জুড়ে বেড়েছে সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা।
৪৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন, অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। দলীয় কর্মসূচি ও সাংগঠনিক কার্যক্রম কার্যত থমকে গেছে। তবুও কেন্দ্রীয় বিএনপি এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি, এমন অভিযোগ করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
সম্প্রতি ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। কিন্তু সেই কমিটিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগপন্থী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে দেখা দেয় তীব্র অভ্যন্তরীণ বিরোধ। শুরু হয় সংঘর্ষ, বোমাবাজি ও সহিংসতা।
সবচেয়ে বড় উত্তেজনা ছড়ায় সদর উপজেলার শ্রমিক দলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের এক নেতাকে পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি করার উদ্যোগ নেওয়ায় দলে তীব্র বিরোধ দেখা দেয়। এই বিরোধের জেরে রোববার (২৩মার্চ) কুপিয়ে হত্যা করা হয় উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি শাকিল মুন্সিকে।
এছাড়াও জেলা বিএনপির বিভিন্ন অংশে দলীয় ব্যানারে চাঁদাবাজি, অনিয়ম ও কর্তৃত্ববাদী নেতৃত্বের অভিযোগও উঠেছে। এসব ঘটনায় জেলা বিএনপির সাংগঠনিক ভীত ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করছেন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
এই অবস্থায় জেলা বিএনপির ২৯ জন নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়ার জন্য। চিঠিতে তারা উল্লেখ করেছেন, অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ, সক্রিয় ও গ্রহণযোগ্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না করলে দলের অস্তিত্ব এই জেলায় সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে।
নেতাকর্মীরা বলছেন, “দলের অভ্যন্তরে যারা অনৈতিক উপায়ে ক্ষমতা ভোগ করছেন, তারা আসলে বিএনপিকে নয়, নিজেদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। এদের সরানো না গেলে আগামীর আন্দোলনে জেলার ভূমিকা শূন্য হয়ে যাবে।”
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলের আভ্যন্তরীণ এই সংকট সমাধানে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ ছাড়া বিকল্প নেই।